রহিমার রহস্যময় বিয়ে

ঘটনার সময়কাল ১৯৪০। গ্রাম তো দুরের কথা, তখন অনেক মহকুমা শহরেও বিদ্যুতের নাম গন্ধ ছিলো না। রহিমার বাস কদমতলি গ্রামে। কদমতলি গ্রামের নাম শুনেছেন তো? ওই যে আমাদের পাশের গ্রামের শেষ প্রান্তে বড় যে আমবাগান ছিলো, তার পশ্চিমপাশের গ্রামটা। - এ কথা বলে মিজান সাহেব একটু দীর্ঘ থামলেন। মিজান সাহেব আমাদের পাশের বাড়ীতে থাকেন। বয়স প্রায় ৮০ ছুই ছুই। সন্ধ্যার পরআমাদের আড্ডা হয় তার দোতলা বাড়ীর ছাদে। মিজান সাহেবের ছাদ আবার একটু অন্ধকার। গাছের আড়ালের কারণে ল্যাম্পপোস্টের আলো পুরোপুরি পৌছায় না। একেবারেই ভুতুড়ে পরিবেশ।আজ হঠাত করে আড্ডায় মধ্যেভূতুড়ে অভিজ্ঞতার বয়ান শুরু হলো। এই বিষয়ে মিজানসাহেবের দেখলাম ব্যাপক আগ্রহ। তার নাকি জীবনে অনেক অদ্ভূতুড়ে অভিজ্ঞতাআছে। তার একটি আজ বলবেন। সবাই আগ্রহনিয়ে কান খাড়াকরে আছি। পরিবেশটাই ভুতের গল্প শোনার জন্য মানানসই। মিজান সাহেব আবার বলতে শুরু করলেন। আমার দিকে ফিরে বললেন, বুঝলেন নাফিদসাহেব, ঘটনাটা আজও একটা রহস্য হয়ে আছে। যা বলছিলাম, রহিমার বয়স তখন ১৪। গ্রামে আমাদের প্রতিবেশী। 

তখনকার দিনে এই বয়সের আগেই মেয়েদের বিয়ে হয়ে যেতো। রহিমার বিয়ে একটু দেরিতেই হয়েছিলো। মা বাবার আদরের ছিলো বলে দেরিতে বিয়ে দিয়েছিলো। রহিমার বিয়ে কার সাথে হচ্ছিলো, আমরা পরিস্কার জানতাম না। রহিমার বাবা ফকির দরবেশ টাইপ মানুষ ছিলেন। খেয়ালি প্রকৃতির। হঠাত করে তার এক মুরিদের পাল্লায় পড়ে মেয়ের বিয়ে ঠিক করে ফেলেছেন। বরের সম্পর্কে আগাম কিছুই আমাদের জানা ছিলোনা। রহিমার বাবাকে ভয় মিশ্রিত ভক্তি শ্রদ্ধা করতাম বলে কিছু জিজ্ঞেসও করা হয়নি কারো। ফকির দরবেশ মানুষ। কার উপর গোস্বা হয় কে জানে! বিয়েরসময় মাগরিবের পরে ঠিক হয়েছিলো। পাত্র পক্ষ মাগরিবের পরে অন্ধকার নামতেই হাজির হলো। বরের সাথে মাত্র দুইজন মানুষ। একজন রহিমার বাবার মুরিদ সেই মানুষটি, পাত্রের মামা। আরেকজন পাত্রের বাবা। এত কম বরযাত্রী আসাতে আমরা সবাই অবাক হলেও কিছু বললাম না। খেয়েদেয়া হুজুর কলেমা পড়ালেন।পাত্রের চেহারা দেখলাম তখন। চেহারাটা কেন জানি সুবিধার লাগলো না। চোখগুলো ঘোলাটো ঘোলাটে। প্রথম দর্শনেই আমাদেরকারো পছন্দ হলো না। কিন্তু কিছুই করার নাই। আমরা খেয়েদেয়ে বাড়ীতে চলে এলাম। পরের দিন ভোরে হইচই শুনে ঘুম ভাঙলো। রহিমাদের বাড়ীতে প্রচন্ড গোলমালের আওয়াজ পেলাম। এক দৌড়ে গিয়ে হাজির হলাম। দেখলাম রহিমা অজ্ঞান পড়ে আছে। সবাই তার মুখে পানির ছিটকা দিচ্ছে। জ্ঞান ফেরার পর সবার কথায় ঘটনা পরিস্কার হলো আমাদের কাছে। জানলাম, বরপক্ষের দুইজন বরকে রেখে রাতেই চলে যায়। রহিমার বাসর ঘরেযখন বর প্রবেশ করে, তখন রাত হয়েছে অনেক। গ্রামের বাড়ী। চারদিক ততক্ষণে নিশ্চুপ। শুধুঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক। হারিকেনের মৃদু আলো জ্বলছে। বরের মুখ একবার মাত্র দেখেছিলো রহিমা। ঘোলাটে চোখ দেখেই ভয়ের একটা শিরশিরে অনুভূতি তাকে ঘিরে ধরে। আরো ভালো করে দেখার আগেই বর হারিকেনের আলো এক ঝটকায় নিভিয়ে দিলো। তারপর নি:শব্দে রহিমার পাশে এসে বসলো। রহিমার কেন যেন অস্বস্তি লেগে উঠলো। তবুও কিছু করার নেই। এই ছেলেই এখন তার সবকিছূর মালিক। সহ্য তো করতেই হবে। কিন্তু ছেলেটি যখন তাকে জড়িয়ে ধরলো, হাতগুলোকেমন যেন লোমশ লোমশ লাগলো। গা সিড়সিড় করে উঠলো রহিমার। অস্বস্তিকর অনুভূতি নিয়েই স্বামীসঙ্গ হলো। তার পুরো শরীর কেমন যেন অসাড় হয়ে উঠলো। তান্ডব শেষে ক্লান্ত রহিমা মরার মত ঘুমালো। ভোরে যখন ঘুম ভাঙলো, পাশ ফিরতেই দেখলো তার বিছানা খালি। বাইরে তখন গন্ডগোলের শব্দ। রহিমার বাবা দরজায় ধাক্কা দিচ্ছেন। দরজা খোলার পরপরই তিনি মেয়েকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেদে উঠলেন। তারপরের ঘটনা শুনেই রহিমাও অজ্ঞান। ঘটনা হলো, যার সাথে রহিমার বিয়ে ঠিক হয়েছিলো,তারা নৌকায় করে আগের দিন দুপুরে রওনা দিয়েছিলো। কিন্তু আসার পথে বিকেলে নৌকাডুবিতে পাত্র তার দুই সাথী সহ মারা যায়। সকাল বেলা তাদের লাশ ভেসেউঠে নদীতে। গ্রামের মনু মাঝি লাশগুলো পাড়ে নিয়ে আসে। - এই হলো ঘটনা। বুঝলেন নাফিদ সাহেব। এইটা এখনো এক রহস্য আমার কাছে। পাত্র যদি আগেই মারা যায়, রহিমার বাসর হলো তাহলে কার সাথে! আরো অবাক করা ঘটনা হলো, রহিমাপরবর্তীতে গর্ভবতী হয়। একটি সন্তানও হয়। ছেলে সন্তান। চেহারা অবিকল বাবার মতই। চোখগুলো ঘোলাটে ঘোলাটে ।

Disclaimer: Gambar, artikel ataupun video yang ada di web ini terkadang berasal dari berbagai sumber media lain. Hak Cipta sepenuhnya dipegang oleh sumber tersebut. Jika ada masalah terkait hal ini, Anda dapat menghubungi kami disini.
Disqus Comments