দুইদিন আগে বাড়ি কিনেছিলেন অঘোরনাথ বাবু।তার মধ্যেই ঘটতে শুরু করল অস্বাভাবিক সব ঘটনা!চিন্তিত হয়ে পড়লেন অঘোরনাথবাবু।
এত রাতে ছাদ থেকে কার কান্নার আওয়াজ পাওয়া যায়,কে-ই বা ছাদের টিনে লাফালাফি করে, কে-ই বা মধ্যরাতে বিকট শব্দে চিৎকার করে.....এসব বড়ই ভাবাচ্ছে অঘোরনাথবাবুকে।
এই তো সেদিন খাওয়ার টেবিলে বসে খেতে খেতে পরিবারের সঙ্গে গল্প করছিলেন তিনি।হঠাৎ ছাদ থেকে কার কান্নার আওয়াজ শোনা যেতে লাগল।অবাক হয়ে গেলেন সবাই। পরমুহূর্তেই ছাদের টিনে শুরু হলো লাফালাফি।বিকট শব্দে। কৌতূহলী অঘোরনাথবাবু ছাদে গিয়ে দেখেন কেউ নেই।ছাদ একেবারে খালি। পরদিনও ঘটল একই ঘটনা।ছাদে লাফালাফি শুরু হতেই অঘোরনাথবাবু ছাদে গিয়ে দেখেন কেউ নেই।সবাই ভেবে নিলেন যে কোনো কাক এসে ছাদের টিনে লাফালাফি করে উড়ে চলে যায়।কিন্তু কাক এসে লাফালাফি করলে এত বড় আওয়াজ হওয়ার কথা না।তবে লাফালাফি করার আওয়াজটা অনেক বড়।কান একেবারে ঝালাপালা করে দেয়।কিন্তু সবাই ব্যাপারটা নিয়ে ভালোমতো মাথা ঘামায়নি।যার ফলে আজ রাতেই ঘটে যায় মস্ত বড় এক ঘটনা।
মধ্যরাত।সবাই ঘুমোচ্ছিলেন। যে যার রুমে।একা একা ঘরে ঘুমোচ্ছিল অঘোরনাথবাবুর একমাত্র ছেলে ১৫ বছর বয়সী অরুণ। কিছুক্ষণ পরেই শুরু হলো লাফালাফির আওয়াজ। জেগে উঠল অরুণ। বুঝতে পারল আওয়াজটা কোথা থেকে আসছে।একটু ভয় ভয় করতে লাগল তার।শেষে কৌতূহল দমাতে না পেরে ছাদে উঠল অরুণ।
ছাদে ঘুটঘুটে অন্ধকার।চারদিকে চাঁদের ঝাপসা আলোয় কিছুই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না।এদিক ওদিক চোখ বোলাল অরুণ।হঠাৎ দেখল ছাদের রেলিঙের উপর দাঁড়িয়ে আছে এক মেয়ে।লাল শাড়ি পড়া।তার সমবয়সী হবে। মেয়েটির পায়ের দিকে তাকাতেই চমকে উঠল অরুণ। .....মেয়েটি রেলিঙের উপর দাঁড়িয়ে আছে তার পায়ের দুই আঙুলের ওপর ভর করে।যেকোনো সময় পরে যেতে পারে।
অরুণ জিজ্ঞেস করল,'কে তুমি?এখানে কেন?'
কোনো উত্তর এলো না।
আবার প্রশ্ন করল অরুণ,'কে তুমি?'
এবারও কোনো জবাব এলো না।
তবে এবার মেয়েটি ঘুরে তাকালো।অরুণ তাকে দেখেই অবাক হয়ে গেলো। এ কেমন চেহারা.....পুরো গালে রক্ত।মুখটা বিকৃত হয়ে গেছে রক্তে।
হঠাৎ অরুণের সামনে চলে এলো মেয়েটি।গলা টিপে ধরলো অরুণের।শ্বাস নিতে পারছে না সে। মাথা ঘুরছে।হঠাৎ মেয়েটি শূন্যে তুলে অরুণকে আছাড় মারল ছাদের রেলিঙে।এগিয়ে এসে আবার অরুণের গলা টিপে ধরল।সারা শরীর থেকে রক্ত ঝরে পড়ছে তার।সে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। কিন্তু পারছে না। কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তি হলো তাদের মধ্যে।একপর্যায়ে মারা গেল অরুণ।
পরদিন সবাই ছাদে উঠে দেখে অরুণের লাশ পরে আছে।সবাই অবাক হয়ে গেলেন এবং কান্নায় ভেঙে পড়লেন।
সেদিন আশেপাশের প্রতিবেশীদের কাছে জানা যায়---
দুই বছর আগে এই বাড়িটিতে নাকি এক পরিবার থাকত।তাদের নাকি ছোট এক মেয়ে ছিল। তার সবচেয়ে প্রিয় ছিল লাল শাড়ি। সবসময় সে লাল শাড়ি পরে থাকত।একদিন লাল শাড়ি পরে নাকি সে ছাদে লাফালাফি করছিল।হঠাৎ ছাদ থেকে পড়ে মারা গেল সে।
অকাল মৃত্যুতে ঐ মেয়েটির আত্মা নাকি এখনও ঐ বাড়িটিতে ঘুরে বেড়ায়।সবকিছু জেনে অঘোরনাথবাবু বুঝতে পারলেন এই বাড়িটিতে তারা আর থাকতে পারবেন না।ঐ ছোট্ট আত্মাটি তাদের শান্তি দিবে না।
তবে এসব কথাগুলো তারা যদি আগএ জানতে পারত তাহলে আগেই বাড়ি ছেড়ে চলে যেত।অরুণকে মরতেও হতো না,সে আজ বেঁচে থাকত।
হতাশায় ভেঙে পড়লেন অঘোরনাথবাবু আর তার স্ত্রী।ঘর তাদের খালি হয়ে গেল।
পরদিন তারা বাড়িটা ত্যাগ করলেন।