ভূতেদের সত্যিকারের বাসা

ভূতেদের যে সত্যিকারের বাসা, ওদের কবর, সেটাই যে হ্যানি দম্পতি খুঁড়েছিলো! এই হ্যানি দম্পতি হলো স্যাম হ্যানি আর জুডিথ হ্যানি। আশির দশকে ওরা টেক্সাসের হিউস্টনে খুব শখ করে একটা বাসা কিনেছিলো। বাসাটা দেখে ওদের মনে হয়েছিলো, ঠিক যেনো ওদের স্বপ্নের বাসা। আর বাসা কিনে ওরাও তো শুরু করে দিলো যতো রাজ্যের কাজ-কারবার।
তো, স্যামের মনে হলো, ওদের এতো শখের একটা বাসা, তাতে একটা সুইমিং পুল না থাকলে হয়? ব্যস, ঠিক করে ফেললো, ওদের বাসার পেছনে একটা সুইমিং পুল বানাবে। কিন্তু ওমা, সুইমিং পুলের কথা ভাবতে না ভাবতেই এক আজব চেহারার বুড়ো এসে হাজির হলো। এসে বলে কিনা, ‘তুমি যেখানে সুইমিং পুল বানানোর কথা ভাবছো, সেখানে আছে অনেক পুরোনো আমলের কবর। তোমার তো সাহস কম নয়, এমনিতেই কবরস্থানের ওপর বাড়ি বানিয়েছো, আবার এখন কবর খুঁড়ে সুইমিং পুল বানানোর চিন্তা করছো!’ এই না বলে বুড়ো কবর কোথায় আছে সেটা দেখিয়ে উধাও হয়ে গেলো।

স্যাম তো যাকে বলে একেবারে আকাশ থেকে পড়লো! এখানে কবরস্থান থাকলে বাড়ি বানানো হলো কেন? কখনো শুনেছো, কবরস্থানে বাড়ি বানানোর কথা? তারপরও বুড়ো যখন বলেছে, খুঁড়ে দেখতে সমস্যা কোথায়? ও একটা কোদাল নিয়ে খুঁড়তে লেগে গেলো। একটু পরে কোদাল কিসে জানে লাগলো। দেখে কি, পাইন কাঠ। হাত দিয়ে উপরের মাটি সরিয়ে দেখে, সত্যি সত্যিই একটা কফিন! খুলে দেখে, ভেতরে একটা কঙ্কালের মতো কি যেনো দেখা যাচ্ছে। পাশে আরেকটু খুঁড়তেই দেখে আরেকটা কফিন। এই কফিনের ভেতরে আবার লাশের বাম হাতের অনামিকায়, মানে যেই আঙ্গুলে বিয়ের আংটি পরা হয়, সেই আঙ্গুলে বিয়ের আংটিও আছে! সঙ্গে সঙ্গে শেরিফকে খবর দিলো ও। ভাবছো, শেরিফ আবার কে? আরে, ওই দেশে থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশকেই শেরিফ বলে। এসে দেখা গেলো, এ তো অনেক পুরোনো কবর, বেশিরভাগ হাড়ই গুড়িয়ে গেছে। যা-ও বা আছে, তার অনেকগুলোই ধরতে না ধরতেই গুঁড়ো হয়ে যাচ্ছে। আশেপাশে খুঁড়ে দেখা গেলো, আরো অনেকগুলো কফিন আছে। তার মানে ঐ আজব বুড়োর কথা আসলেও সত্যি। এখানে অনেক আগে আসলেও একটা কবরস্থান ছিলো।
কি আর করা! শখের সুইমিং পুলের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললো স্যাম। কিন্তু মাথায় তো এক নতুন পোকা ঢুকে গেছে, কাদের কবরস্থান এটা? কবরগুলোই বা কাদের? আর এই কবরস্থান পরিত্যক্তই বা হলো কি করে? খোঁজ নিতে নিতে জেসপার নর্টন বলে এক লোকের খোঁজ পেলো স্যাম। সে অ-নে-ক আগে এই বাসায় থাকতো। তার কাছ থেকেই জানতে পারলো, শুধু তাদের বাসাটাই নয়, আশেপাশের অনেকগুলো বাসাই তৈরি হয়েছে একটা পরিত্যক্ত আফ্রিকান-আমেরিকানদের কবরদের উপরে। আফ্রিকান-আমেরিকান কাদের বলে জানো তো? যে সব আফ্রিকান আমেরিকায় থাকতে গিয়েছিলো, ওদেরকে বলা হয় আফ্রিকান-আমেরিকান। আর আগে তো ওরা বেশিরভাগই যেত দাস হিসেবে। কেন, আগে ইউরোপ-আমেরিকার সাদা মানুষেরা যে কালো মানুষদের দাস হিসেবে ব্যবহার করতো, সে কথা জানো না বুঝি? এটা অবশ্য কয়েক শ’ বছর আগের কথা। এখন আর পৃথিবীতে কেউ কারো দাস নয়। বড়োজোর, তোমার বাসার কাজের ছেলে বা মেয়েটা তোমাদের মাইনে দেয়া কাজের লোক। কিন্তু কোনো ভাবেই দাস নয়, মানুষ। ওর সাথে কিন্তু সেভাবেই আচরণ করবে, কেমন?
শুধু তাই নয়, এই কবরস্থান সম্পর্কে আরো অনেক তথ্যই জোগাড় করে ফেললো স্যাম। এই কবরস্থানে মোট কবর দেয়া হয়েছিলো ৬০ জনকে। সর্বশেষ কবর দেয়া হয়েছিলো ১৯৩৯ সালে। তারপর আর কাউকেই এখানে কবর দেয়া হয়নি। তা না হলে কি আর কবরস্থানে বাড়ি বানানো যায়? আর যে দুইটা কবর স্যাম খুঁড়েছিলো, ওই দুটো কবর ১৯৩০ সালের, বেটি আর চার্লি থমাসের। ওরা আবার স্বামী-স্ত্রী ছিলো।
এতো কেবল কাহিনীর ভূমিকা। আসল কাহিনী শুরু হলো এরপরে। জেনে হোক, আর না জেনে হোক, স্যাম তো দুটো কবর খুঁড়লো, এবার কবরের মালিক বেটি আর চার্লিকে ঠেকায় কে? ওরা শুরু করলো জ্বালাতন। আর শুরু করবে না কেন, বলো? তোমার সুখের বাসা এভাবে ভেঙে দিলে তুমি কি জ্বালাতন করতে না? প্রথমে ওরা কেবল স্যাম আর জুডিথের বাসায় জ্বালাতন করতো। দেখা গেলো, ওদের ঘড়িটার ব্যাটারি খুলে রেখে দিলো। কিংবা পানির কল একবার খুলছে, আবার বন্ধ করছে। কখনো বা টিভির সুইচ-ই বন্ধ করে দিচ্ছে। নয়তো ফ্যান অফ করে দিচ্ছে। কিছুদিন পর ভূতেদের জ্বালাতন শুধু ওদের বাড়িতেই সীমাবদ্ধ থাকলো না, আশেপাশের বাসাতেও শুরু হয়ে গেলো। দিনদিন জ্বালাতনের মাত্রা এতোই বেড়ে গেলো, যে ওদের পক্ষে স্বাভাবিকভাবে বাসায় থাকাই অসম্ভব হয়ে উঠলো।
একদিন হলো এক মজার ঘটনা। রাতের বেলা জুডিথ ছিলো একা, স্যাম গিয়েছিলো নাইট ডিউটি করতে। তো রাতে জুডিথ শুনলো বারান্দার স্লাইডিং ডোর ঠেলে কে যেন ঢুকলো। অথচ ডোর ছিলো লক করা। ও তো জানেই, এ বেটি আর চার্লি ছাড়া আর কারো কাজ হতেই পারে না। কোনোমতে চোখ-মুখ চেপে শুয়ে থেকে রাত পার করে দিলো। সকালে স্যাম আসলে বিছানা ছেড়ে উঠে ক্লোজেট খুলে দেখে, ওর শখের লাল জুতো জোড়া নেই! নেই তো নেই, খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। দু’জন মিলে বাসার যতো জায়গা আছে, সব জায়গায় খুঁজেও ওরা জুতো জোড়ার কোনো নাম-নিশানাই পেলো না। শেষমেশ বাড়ির পিছে গিয়ে দেখে জুতো জোড়া বেটির কবরের উপর সুন্দর করে সাজানো! পরে খেয়াল করে দেখে, সেদিন ছিলো বেটির জন্মদিন। আর তাই যেন চার্লি ওকে জন্মদিনের উপহার দিয়েছে জুডিথের লাল জুতো জোড়া! কার না রাগ লাগে বলো তো দেখি! কিন্তু কিছু করারও নেই; ভ‚তের কাণ্ড বলে কথা!
দিন দিন ওদের এমনি জ্বালাতন আরো বাড়তে লাগলো। আশেপাশের বাসাগুলোতেও কোথাও কোনো গাছ হয় না। শখ করে গাছ লাগিয়েছো কি দু’দিন পরেই মরে যাবে। কিভাবে যে মরে যায়, কে জানে! যা কিছুই করো, কিছুতেই কিছু হয় না। আর সুইচ অন-অফ করা, পানির কল খোলা-বন্ধ করা, চুলা জ্বালানো-বন্ধ করা, এসব তো আছেই। সাথে যুক্ত হলো কথা বলা। প্রায়ই ওরা শুনতো, আশেপাশে কারা যেন কথা বলছে; বিড়বিড় করে কথা বলার মতো মৃদু শব্দ শোনা যেতো।
কাঁহাতক আর সহ্য করা যায়! স্যাম আর জুডিথ ঠিক করলো, অন্য কোথাও বাসা নেবে। কিন্তু টাকা কোথায়? ওরা যেই কোম্পানির কাছ থেকে বাড়িটা কিনেছিলো, তাদের নামে এক মামলা ঠুকে দিলো! কিন্তু ফল হলো উল্টো, মামলা হেরে আরো জরিমানা গুণতে হলো ওদেরকে। এবার ঠ্যালা সামলাও! কি করা যায়।
এবার জুডিথ কোমর বাঁধলো; হয় এসপার নয় ওসপার। ওদের কবর নষ্ট করেছি, ওদেরকে কবরের বাঁধন থেকে মুক্ত করে দিয়েছে, ওরা আর কী চাইতে পারে, বড়োজোর কারো জীবন! প্রয়োজনে ও ওর জীবনই দিয়ে দিবে, তবু এই জ্বালাতন আর মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে থাকবে না। স্যামদের বাড়ির পেছনে উঠোনে গিয়ে ও নিজেই একটা কবর খুঁড়তে শুরু করলো। একটু পর ওর বড়ো মেয়ে টিনাও এসে হাত লাগালো। দুজনে মিলে আধ ঘণ্টার মধ্যেই একটা বড়োসড়ো গর্ত খুঁড়ে ফেললো। এরপর টিনার যেন শরীর কেমন কেমন করতে লাগলো। ও ড্রয়িংরুমে গিয়ে একটা সোফায় এলিয়ে পড়লো। একটু পর ও বলতে লাগলো, ‘মা, বাবা, আমার বাচ্চাটাকে তোমরা দেখো, আমার বাচ্চাটাকে দেখো।’ আর চোখের মধ্যে কী যে ভয় খেলা করতে লাগলো! আর তারপর ওর চোখ বন্ধ হয়ে আসতে লাগলো। ওর মুখ দিয়ে আর কথা বের হয় না।
দেখে তো সবাই-ই খুব ভয় পেয়ে গেলো। খবর দেয়া হলো এক মনোবিজ্ঞানীকে। কিন্তু সে আসা পর্যন্ত তো টিনাকে জেগে থাকতে হবে, নাকি? সবাই মিলে ওর সাথে কথা বলে ওকে জাগিয়ে রাখার চেষ্টা করতে লাগলো। মনোবিজ্ঞানী এসে ওকে দেখে-টেখে বললো, ওর এক বড়ো ধরনের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। সবাই মিলে ওকে বাঁচানোর খুব চেষ্টা চলতে লাগলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো লাভ হলো না। দুই দিন পর মারা গেলো টিনা।
আর কী! মেয়ে হারানোর শোকে স্যাম আর জুডিথের তো পাগল হওয়ার দশা। খুব তাড়াতাড়ি-ই ওরা সেই অভিশপ্ত বাড়ি ছেড়ে দিলো। বাসা বাঁধলো মন্টানায়। এভাবে নিজেদের মেয়েকে হারিয়েই কবর খোঁড়ার অভিশাপ কাটিয়েছিলো স্যাম আর জুডিথ। কবর খোঁড়ার অভিশাপ, সে কী আর যে সে কথা!

Disclaimer: Gambar, artikel ataupun video yang ada di web ini terkadang berasal dari berbagai sumber media lain. Hak Cipta sepenuhnya dipegang oleh sumber tersebut. Jika ada masalah terkait hal ini, Anda dapat menghubungi kami disini.
Disqus Comments