মধ্যরাতে কঙ্কালের সাথে

স্টেশনের লোহার গেটটা এক ধাক্কায় খুলে দৌড় দিলাম টিকিট কাউন্টার এর দিকে । অনেক রাত হয়ে গেছে, ট্রেন পাব কিনা জানিনা । টিকিট কাউন্টারের সামনে যেয়ে হতাশ হতে হল আমকে । বন্ধ । কিন্তু কিছু করার নাই আমার, এইখানে অপেক্ষা করা ছাড়া। একটা টুল দেখে বসে পড়লাম সেখানে । আজকে সকালেই জয়দেবপুর এসেছি একটা ইন্টারভিউ দেয়ার জন্য । এম.বি.এ পাশ করেছি গতবছর । বহু জায়গায় ইন্টারভিউ দিয়েছি । কখনই কোন রিপ্লাই আসেনি । সুতরাং কি হবে তাতো জানিই । বরাবরের মত কোন রিপ্লাই আসবেনা । কিন্তু তাও দিতে আসা, কিছুটা ফর্মালিটি আরকি । এসে পড়লাম বিপদে । ইন্টারভিউ দিতে দিতে বিকেল হয়ে গেল, সেখান থেকেগেলাম এক বন্ধুর বাসায়, সেইখান থেকে রাতের খাওয়াদাওয়াসেরে স্টেশনে ফিরতে ফিরতে রাত প্রায় সাড়ে বারোটা বেজে গেল । এখন উল্লুকের মত বসে থাকাছাড়া কোন উপায় নাই । কখন ট্রেন আসবে কে জানে । বসে আছি আর মাঝে মাঝেই নিজের শরীরে জোরে থাপ্পড় বসাচ্ছি, মশা তাড়ানোর জন্য । বসে থাকতে থাকতে একটু ঝিমুনি এসে গেছিল । হঠাৎ কানেরকাছে কে যেন চিৎকার করে উঠল “ পেয়ে গেছিরে” । চিৎকার শুনে ধড়মড়িয়ে উঠে বসলাম আমি । এবার আমার চিৎকার দেওয়ার পালা । দেখলাম কিম্ভূতদর্শন দুইটা কঙ্কাল আমার সামনে দাঁড়ানো । “কি ভেবেছিলিরে টংরা, তুইলুকিয়ে থাকলে আমরা তোকে খুঁজে পাবনা?” একটা কঙ্কাল বলে উঠল ।

 “ টংরা কে”, বললাম আমি, ভয়ে ঘেমে উঠেছি । “কে আবার, তুই টংরা । তাড়াতাড়ি চল, দেরি হয়ে যাচ্ছে যে”, বলল অন্য কঙ্কালটা । এই কঙ্কালটার আবার একটা পা নাই । “ কোথায় যাব?” “ যেন কিছু বোঝেনা, তোর আজকে বিয়ে না, তাড়াতাড়ি চল । ” । ” “ বিয়ে!”, চমকে উঠলাম আমি “কিসের বিয়ে, কার বিয়ে?”, গলা দিয়ে ফ্যাস ফ্যাস আওয়াজ বের হল । “তোর বিয়ে, বট গাছের পেতনীর সাথে । বিয়ের আসর ছেড়ে পালিয়ে আসলি, আর এখন কিছু বুঝতে পারছিস না?”, বলল একপায়াটা । “আমি তো মানুষ, আমার পেতনীর সাথে বিয়ে হয় কিভাবে? ”, বললাম আমি । “কে বলল তুই মানুষ, মড়া মানুষের ভিতর লুকালেই মানুষ হয়ে যায় নাকি?” “মড়া মানুষ? আরে মড়া পাচ্ছেন কোথায়, আমি তো জলজ্যান্ত মানুষ, দেখছেন না? মরলে আমি টের পেতাম না? ” খ্যাঁক খ্যাঁক করে হেসে উঠল একপায়াটা । “ওরে, মানুষ কখন মরে তা কিসে টের পায়?” বলল সে ।“সে কি তাহলে কি সত্যিই আমি মরে গেছি?” চমকে উঠলাম আমি । “হ্যারে হ্যা, তুই মরে গেছিস রে, আর আমাদের টংরা তোর পেটের মধ্যে থেকে কথাবলছে । ” চোখে পানি চলে আসল আমার । হায়, জীবনেতো ধরতে গেলে এখনও কিছুই দেখিনি । প্রেমকরিনি, নাইট ক্লাবে যাইনি । সবইতো এখনও করাবাকি । শেষ পর্যন্ত কিনা এভাবেবেরসিকের মত মরলাম? “যেতে কি হবেই?”, একটু ভয়েভয়ে জিজ্ঞেস করলাম আমি । “ হবে না আবার?”, ধমক দিল প্রথম ভূতটা “ তোর না গায়ে-গু হয়ে গেছে । ” “গায়ে গু আবার কি?” “মানুষের যেমন গায়ে হলুদ হয়, তেমনি আমদের হয় গায়ে গু, কিছু বুঝিস না?” বলল প্রথম কঙ্কাল টা । হায়, সব আশা বুঝি শেষ । শেষপর্যন্ত বোধহয় আমকে বট গাছের পেতনীকেই বিয়ে করতেহবে । বট গাছের পেতনী দেখতে কেমন হবে কে জানে? তবু ও একটা শেষ চেষ্টা করা যাক । “ দেখুন আমি বোধহয় মরিনি, আমকে ছেড়ে দিন”, বললাম আমি । “ কোন ভূত যখন কোন মড়ার ভিতরে ঢুকে পরে, তখন সেই মড়াটার চেহারা সেই ভূতটারমতো হয়ে যায় । দেখনা, তোর চেহারাও টংরার মতো কেমন অকুৎসিত হয়ে গেছে । ”, বললএকপায়াটা । চেহারা আমার ভালোনা, এটা ঠিক । তাই বলে এমন অপমান? আমাকে বলে অকুৎসিত? মানে কুৎসিতের চেয়েও কুৎসিত? “ দেখেন ভাল হচ্ছেনা কিন্তু । আমি কোন টংরা ফংরা না”, একটু ঝাঁঝের সাথে বললাম আমি । “তুই যে টংরা না মানুষ, তার কোন প্রমাণ দিতে পারবি?” প্রমাণ? একটু ভাবলাম আমি । “হ্যা পারব । ”, বললাম আমি । “কি প্রমাণ?” “আমি কবিতা লিখতে পারব । আপনাদের টংরা কি কবিতা লিখতে পারে?” “ কবিতা?” আবার খ্যাঁক খ্যাঁক করে হাসল একপায়াটা । “কবিতার নাম শুনলেও তো আমাদের টংরা অশ্বথ গাছে উঠে পালায় । ” “ব্যাস, এইতো প্রমাণ হয়ে গেল যে আমি টংরা না” খুশিতে চেঁচিয়ে উঠলাম আমি । “আগে প্রমাণ কর তুই কবিতালিখতে পারিস, তারপর বুঝব”,বলল প্রথম কঙ্কালটা, “তোর কবিতা কখনও ছাপা হয়েছে?” “আমার কবিতা এতটা উচ্চমানের, যে সেটা ছাপালে অন্য কবিরা আর সুযোগ পাবে না । তাই ছাপা হয়নি । একজনসম্পাদক নিজেরমুখে আমাকে একথাবলেছেন । ”গর্বের সাথে বললাম আমি । “দেখি লেখতো একটা কবিতা । আমার নাম নিয়ে একটা কবিতালেখ। ”, বলল প্রথম কঙ্কালটা । “নামকি আপনার?” জিজ্ঞেস করলাম আমি । “কানাবেল”, বলল প্রথম কঙ্কালটা । “আহা, নামের কি বাহার!”, মনে মনে বললাম আমি । যাই হোক ব্যাগ থেকে কাগজ কলম নিয়ে বসে গেলাম কবিতালিখতে । কিছুদূর লেখার পর জিজ্ঞেসকরল কঙ্কালটা, “কিরে লেখা হল?” “হ্যা শেষ । ” “পড়তো দেখি । ” একটু গলা খাঁকারি দিয়ে পরতে শুরু করলাম আমি, “তেল আছে, টেল আছে আর আছে কদবেল, মেল আছে, জেল আছে আর আছে পাস ফেল । খুন আছে, চুন আছে আর আছে বানডেল সবচেয়ে মহান হল কঙ্কাল কানাবেল । ” “ বাহ বাহ”, আনন্দে হাততালি দিয়েউঠল কানাবেল । “তাহলে প্রমাণ হলোতো যে আমি টংরা না?”, জিজ্ঞেস করলাম আমি । কি যেন বলতে যাচ্ছিল কানাবেল, কিন্তু তার আগেই চিৎকার করে উঠল একপায়াটা, “পেয়েছি পেয়েছি টংরাকে, ওই যে অশ্বথ গাছের উপরে । ” কানাবেল আর একপায়া দৌড় দিল গাছটার দিকে ।

Disclaimer: Gambar, artikel ataupun video yang ada di web ini terkadang berasal dari berbagai sumber media lain. Hak Cipta sepenuhnya dipegang oleh sumber tersebut. Jika ada masalah terkait hal ini, Anda dapat menghubungi kami disini.
Disqus Comments