জানালা দিয়ে বয়ে আসছে মৃদু হাওয়া।


. খোলা জানালা দিয়ে বয়ে আসছে মৃদু হাওয়া। বালিসে মাথা রেখে রবীন্দ্রনার্থের গল্পগুচ্ছ পড়ছি। মাথার উপর জ্বলছে ১০০ পাওয়ারের লাইট। সারাদিন বই পড়তে পড়তে ভাল লাগছিলো না তাই রবীন্দ্রনার্থের গল্প পড়ে মনটাকে ফ্রেশ করতে চাইছলাম। তিন দিন সরকারী ছুটে হওয়া মেসের সকলে বাড়ি চলে গেছে। পরীক্ষার কারণে শুধু আমি একলা রয়ে গেছি বহুকালের পুরনো এই বাড়িটিতে। ঢাকার কাছে থাকার জন্য এর চেয়ে আর ভালো যায়গা খুঁজে পেলাম না। আমার বন্ধু মরশেদ এখানে থাকে। ভাড়া তুলনামূলক ভাবে কম হওয়ায় আমিও উঠে গেলাম। এই দুতলা বাড়িটিতে আমি ছাড়া আর কেউ নেই। দারোয়ান আছে গেটের কাছে থাকবে রাত দশটা পর্যন্ত। তারপর প্রধান ফটক বন্ধ করে আমাকে থাকতে হবে এই আলোÑছায়ায় ভরা বাড়িটিতে। বাতাসের জোড় বেশি তাই জানালাটা বন্ধ করে দিলাম। তারপর আবার বই পড়তে লাগলাম। হঠাৎ কোন সংকেত না দিয়ে জানালাটা খুলে গেল। চমকে উঠলাম আমি চমকে গেল আমার হৃদপি-

এত রাতে ছাদ থেকে কার কান্নার আওয়াজ


দুইদিন আগে বাড়ি কিনেছিলেন অঘোরনাথ বাবু।তার মধ্যেই ঘটতে শুরু করল অস্বাভাবিক সব ঘটনা!চিন্তিত হয়ে পড়লেন অঘোরনাথবাবু।
এত রাতে ছাদ থেকে কার কান্নার আওয়াজ পাওয়া যায়,কে-ই বা ছাদের টিনে লাফালাফি করে, কে-ই বা মধ্যরাতে বিকট শব্দে চিৎকার করে.....এসব বড়ই ভাবাচ্ছে অঘোরনাথবাবুকে।
এই তো সেদিন খাওয়ার টেবিলে বসে খেতে খেতে পরিবারের সঙ্গে গল্প করছিলেন তিনি।হঠাৎ ছাদ থেকে কার কান্নার আওয়াজ শোনা যেতে লাগল।অবাক হয়ে গেলেন সবাই। পরমুহূর্তেই ছাদের টিনে শুরু হলো লাফালাফি।বিকট শব্দে। কৌতূহলী অঘোরনাথবাবু ছাদে গিয়ে দেখেন কেউ নেই।ছাদ একেবারে খালি। পরদিনও ঘটল একই ঘটনা।ছাদে লাফালাফি শুরু হতেই অঘোরনাথবাবু ছাদে গিয়ে দেখেন কেউ নেই।সবাই ভেবে নিলেন যে কোনো কাক এসে ছাদের টিনে লাফালাফি করে উড়ে চলে যায়।কিন্তু কাক এসে লাফালাফি করলে এত বড় আওয়াজ হওয়ার কথা না।তবে লাফালাফি করার আওয়াজটা অনেক বড়।কান একেবারে ঝালাপালা করে দেয়।কিন্তু সবাই ব্যাপারটা নিয়ে ভালোমতো মাথা ঘামায়নি।যার ফলে আজ রাতেই ঘটে যায় মস্ত বড় এক ঘটনা।

মধ্যরাত।সবাই ঘুমোচ্ছিলেন। যে যার রুমে।একা একা ঘরে ঘুমোচ্ছিল অঘোরনাথবাবুর একমাত্র ছেলে ১৫ বছর বয়সী অরুণ। কিছুক্ষণ পরেই শুরু হলো লাফালাফির আওয়াজ। জেগে উঠল অরুণ। বুঝতে পারল আওয়াজটা কোথা থেকে আসছে।একটু ভয় ভয় করতে লাগল তার।শেষে কৌতূহল দমাতে না পেরে ছাদে উঠল অরুণ।
ছাদে ঘুটঘুটে অন্ধকার।চারদিকে চাঁদের ঝাপসা আলোয় কিছুই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না।এদিক ওদিক চোখ বোলাল অরুণ।হঠাৎ দেখল ছাদের রেলিঙের উপর দাঁড়িয়ে আছে এক মেয়ে।লাল শাড়ি পড়া।তার সমবয়সী হবে। মেয়েটির পায়ের দিকে তাকাতেই চমকে উঠল অরুণ। .....মেয়েটি রেলিঙের উপর দাঁড়িয়ে আছে তার পায়ের দুই আঙুলের ওপর ভর করে।যেকোনো সময় পরে যেতে পারে।
অরুণ জিজ্ঞেস করল,'কে তুমি?এখানে কেন?'
কোনো উত্তর এলো না।
আবার প্রশ্ন করল অরুণ,'কে তুমি?'
এবারও কোনো জবাব এলো না।
তবে এবার মেয়েটি ঘুরে তাকালো।অরুণ তাকে দেখেই অবাক হয়ে গেলো। এ কেমন চেহারা.....পুরো গালে রক্ত।মুখটা বিকৃত হয়ে গেছে রক্তে।
হঠাৎ অরুণের সামনে চলে এলো মেয়েটি।গলা টিপে ধরলো অরুণের।শ্বাস নিতে পারছে না সে। মাথা ঘুরছে।হঠাৎ মেয়েটি শূন্যে তুলে অরুণকে আছাড় মারল ছাদের রেলিঙে।এগিয়ে এসে আবার অরুণের গলা টিপে ধরল।সারা শরীর থেকে রক্ত ঝরে পড়ছে তার।সে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। কিন্তু পারছে না। কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তি হলো তাদের মধ্যে।একপর্যায়ে মারা গেল অরুণ।
পরদিন সবাই ছাদে উঠে দেখে অরুণের লাশ পরে আছে।সবাই অবাক হয়ে গেলেন এবং কান্নায় ভেঙে পড়লেন।
সেদিন আশেপাশের প্রতিবেশীদের কাছে জানা যায়---
দুই বছর আগে এই বাড়িটিতে নাকি এক পরিবার থাকত।তাদের নাকি ছোট এক মেয়ে ছিল। তার সবচেয়ে প্রিয় ছিল লাল শাড়ি। সবসময় সে লাল শাড়ি পরে থাকত।একদিন লাল শাড়ি পরে নাকি সে ছাদে লাফালাফি করছিল।হঠাৎ ছাদ থেকে পড়ে মারা গেল সে।
অকাল মৃত্যুতে ঐ মেয়েটির আত্মা নাকি এখনও ঐ বাড়িটিতে ঘুরে বেড়ায়।সবকিছু জেনে অঘোরনাথবাবু বুঝতে পারলেন এই বাড়িটিতে তারা আর থাকতে পারবেন না।ঐ ছোট্ট আত্মাটি তাদের শান্তি দিবে না।
তবে এসব কথাগুলো তারা যদি আগএ জানতে পারত তাহলে আগেই বাড়ি ছেড়ে চলে যেত।অরুণকে মরতেও হতো না,সে আজ বেঁচে থাকত।
হতাশায় ভেঙে পড়লেন অঘোরনাথবাবু আর তার স্ত্রী।ঘর তাদের খালি হয়ে গেল।
পরদিন তারা বাড়িটা ত্যাগ করলেন।

আমার পা কোনো শক্তি পাচ্ছিলো না


আমার পা কোনো শক্তি পাচ্ছিলো না।সামনে সাদা চাদরে মোড়ানো কোনো বিশালাকার মানুষ।হাত,পা,মুখ কিছুই দেখা যাচ্ছে না।ঠিক যেমন মানুষ মারা গেলে কাফন পড়ায় তেমনি।তবে ভীতিকর পরিবেশের অন্য কারণ।চাদর মোড়ানো পুরো শরীর শূণ্যে ভাসমান।কোনো কিছুই নেই অবলম্বন হিসেবে।তবে থেকে থেকে চিৎকার আসছে কাফন থেকে।কাউকে নির্মমভাবে মারলে যেমন চিৎকার করে ঠিক তেমন।সমনে এগোতে গিয়ে এক পায়ের হাটু মাটিতে বসে গেলো,হয়ত শক্তি পাচ্ছিলো না।পা সোজা করে ঐ অদ্ভুত জিনিসের পিছনে হাটতে চেষ্টা করছিলাম।জানিনা এবার এই দুঃসাহসী শক্তি কোথা থেকে পাচ্ছি।আমার কলিজা হয়ত এখন পাথর হয়ে গেছে।এগুচ্ছি ঐ সাদার পিছু পিছু।আমার হাতের লাইটটা কোথায় তার খোঁজ পাচ্ছি না।চারদিক অন্ধকার।তবে আমার পায়ের অলসতা নেই,কনো ভয় নেই।ভয় কাটিয়ে হাটছি তো হাটছি।……….


প্রায় ৫ মিনিট পর আমি আমার উপস্থিতিকে এক বিশাল খোলা নদীর তীরে আবিষ্কার করলাম। শো শো করে প্রচুর বাতাস বইছে,সাথে উড়ে আসছে বালি।এবার কিছুটা ভয় পেয়ে গেছি।আশ পাশ খুঁজতে শুরু করলাম আমি কোথায়? আর সাদা চাদরই বা কোথায়?সামনে চাঁদের হাল্কা আলোয় দেখতে পাড়ছি বধ্যভূমির নিশান।আমি প্রচণ্ড ভয়ে শিক্ত।তবুও এগিয়ে চলছি সামনে।দূরে দেখা যায় শুধু কালো আর কালো অন্ধকার।কোনোখানে এক বিন্দু আলোও নেই শুধু চাঁদের ম্লান ছাড়া।দূরে সেই আগের মত থেকে থেকে শেয়াল ডাকছে।বাতাস, বালি আর শেয়াল এর ডাকে সে এক ভীতিকর পরিস্থিতি। সামনে এগিয়ে একটা ফলক চোখে পড়ল।ফলকটা পড়ে দেখলাম- “অমলপুর বধ্যভূমি “।শরীর জুরে কেমন একটা শিহরণ দিয়ে উঠল;হাত,পা কেঁপে উঠল।ঠিক নিচে ইট দিয়ে লম্বা বেঞ্চি মত বসার জায়গা করা ঠিকই তবে ধুলো ও মাকড়শারজাল দিয়ে ভর্তি।হয়ত অনেকদিন থেকে কেউ বসে না।ক্লান্ত ছিলাম আর ভয়ে শরীরটাও কাঁপছিলো তাই একটু বসার চেষ্টা করতেই আমি ধুলোয় লুটিয়ে পড়ি।মনে হচ্ছিলো কেউ ধাক্কা দিয়েছে পিছন থেকে।হাত,পা মুখ সব ধুলোয় মাখামাখি।উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলাম তবে আমি ব্যার্থ।পিছন থেকে কোনো কিছুর খোঁচা খেয়ে আবার লুটিয়ে পড়েছি।পিছন ফিরে দেখার চেষ্টা করলাম। হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি।এ তো সেই পাগল।যে আমার এতদিনের ভয়ের কারণ।ভাবতেই দুবার মাথায় সজোরে বারি দিয়ে বলল…..
Please visit mobiledokan
>আসতে মানা করেছি কিন্তু এসে গেলি??ওদেরও মানা করেছিলাম কিন্তু ওরা তোকে এখন মারবে।যা যা ভাগ।
বলে সে ছুটে এসে আমার জামা টানাটানি করছিলো।কী যেনো খুঁজছিল আমার কাছে।আমি বার বার গলা ভেজাচ্ছিলাম,আমার স্বপ্ন যেনো আবার সত্যি না হয়ে যায়।তবে পাগলটা আমাকে অবাক করে দিয়ে দৌড়ে পালালো।শুধু তাকিয়ে ছিলাম তার দৌড়ের দিকে আর মনকে দিচ্ছিলাম শান্তনা।এবার পিছন থেকে আবার সেই শো শো শব্দ করছে,আবার বাম পাশ থেকে, ডান পাশ থেকে এক এক করে সব দিক থেকেই একই শব্দ ভেসে আসছে।
ঐ লাশটা এবার আমার দিকেই আসছে।আমি ভয়ে উঠে দৌড় দিয়েছি,তবে এত বালুতে তো দৌড়ানো সম্ভব নয়।দৌড়াতে পারছি না বলে চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেলো।আমি কাঁদছিলাম,প্রচুর জোরে কাঁদছিলাম।বাতাসের বেগ আরও বেরে যাচ্ছিলো,বালিগুলো আমকে আকরে ধরছিলো।মৃত্যু ভয়ে প্রাণপণ দৌড়াচ্ছিলাম।তখনি আমার উপরে লাশটা এসে পরে।আমার প্রাণ বের হয়ে যায় যায়,,আমি প্রচন্ড ব্যাথা আর ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠি।এবার গলা দিয়ে বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার আসছে,তবে শুধু আমারই কথার প্রতিফলন হচ্ছিলো।নদীর এপাশ আর ওপাশ আমারই চিৎকারে ফেটে যাচ্ছে,আমার সাথে তাল মিলিয়ে ডাকছিলো শেয়ালগুলোও।মনে হচ্ছে এই শহরে আমি শুধু একা আর ওরা আমার ডাকের প্রতিধ্বনি ।ঘাড়টা ব্যাথা করছিলো তাই জোরে লাশটাকে সরিয়ে দিলাম।আস্তে করে উঠে দাড়ালাম।তবে এবার বেগতিক ভাবে চিৎকার করছি,সাথে কাঁদছি ।সাদা কাপর সরে গেছে তবে ভিতরে আরও ধবধবে সাদা রঙ এর মানূষ।আর মানুষটা অন্য কেউ নয় আমাদের কাশেম আনকেল।এবার মনে হচ্ছে আমি পাগল হয়ে যাবো,জোরে জোরে কাঁদছি,মাথায় কিছুই ঢুকছে না।মাথার চুল টানছিলাম,প্রচণ্ড জোড়ে টানছিলাম।মনে হচ্ছিলো অনেকগুলো চুল উঠে যাচ্ছে।আর পারছি না।মৃত্যুযন্ত্রণা থেকেও তীব্র এ ভীতি।তখনি আমার চুলে প্রচণ্ড টান মেরে কোনো অদৃশ্য ব্যাক্তি আমাকে ছিটকে ফেলে।আমি কিছুটা দূরে গিয়ে পড়ি।বুঝলাম অনেক চুল ছিড়ে গেছে তাই মাথা বেয়ে রক্ত পরছিলো,আর বাম হাতটা মনে হয় ভেঙ্গে গেছে।উঠে দাঁড়ানোর বৃথা চেষ্টা করলাম তবে পারলাম না,মাথাটা হাল্কা তুলে লাশের দিকে তাকানোর চেষ্টা করলাম।এবার আনকেল চেয়ার এ বসা এবং হাত পা শিকল দিয়ে বাধা।মনে হচ্ছে কোনো আসামী। অন্ধকার থেকে একটা ৪/৫ বছরের মেয়ে হুট করে আসলো।গায়ে দুধের মত সাদা জামা তবে শরীরটা কেমন ঝলসে যাওয়া,হাতে একটা আগুনের কুণ্ডলী ।ভয় পাচ্ছিলাম তবে তাকিয়ে ছিলাম।নিমিষের মধ্যেই ঝলসে দিলো আনকেল এর শরীর,হঠাৎ মনে হয় সে জিন্দা হয়ে গেলো।চিৎকার শুনতে পাড়ছি আনকেলের তবে আর শুনতে চাইছি না।এসব সওয়ার মত কোনো ক্ষমতা আমার নেই।এই আগুনে পোড়ার যন্ত্রণা থেকে মৃত্যুই শ্রেয়।
এবার দুজন মহিলা ও পুরুষকে দেখতে পেলাম।মহিলার শরীর রক্তে ভেজা,শারী একদম কাদায় মাখামাখি।চোখ দুটো উপরে ফেলা,চোখের গর্ত দিয়ে বক্ত ঝড়ছে অবিরাম।ভয়ংকর কুশ্রী লাগছিলো।পুরুষ্টটির হাতের সব আংগুল কাটা,শরীরে বিভিন্ন অংশ ক্ষত বিক্ষত,মাথাটা জখম একদম থেতলে যাওয়া।আমি মাথা নামিয়ে বালুতে মুখ গুঁজলাম,মুখ গুজেই জোরে জোরে কাঁদছি তবে বালুগুলো সব পানি টেনে নিচ্ছে।নিজেকে পাগল মনে হচ্ছিলো,ভয়ে জোরে জোরে খিঁচুনি দিচ্ছিলো শরীরটা।জীবনের প্রথম এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছি।
এবার মুখটা আবার উপরে উঠে গেলো,নিঃশ্বাস যে নিতে পাড়ছিলাম না।এবার বিভৎস এক পরিস্থিতির সম্মুখীন হলাম।আনকেল এর পুরো শরীর এর চামড়া ছিলে ফেলছে মহিলাটা,আর এক এক করে সব আংগুল কেটে ফেলছে পুরুষটা।চিৎকার করছে,আর্তনাদ করছে তবে কেউ শুনছে না।আমি এই অবিস্থা দেখে মৃত প্রায়,আবার ঐ অবিস্থার চিন্তা করে পাগল হচ্ছি।ছোট মেয়েটা মাথার খুলিতে প্রচন্ড গতিতে হানছে এক চোখা জিনিস দিয়ে।প্রতিবার হানা দিয়ে বের করার সময় মস্তিষ্কের খণ্ডের সন্ধান পাচ্ছি।এবার মহিলাটা আংগুল দিয়ে উপরে নিচ্ছে তার চোখ দু’টো,আর ফোয়ারার মত রক্ত ঝরছে।আমার চোখ আর সইতে পাড়ছে না এই নিষ্ঠুরতা।নিজেই নিজের মাথায় মাড়ছি ডান হাত দিয়ে।তবুও এ ভয়ংকর শাস্তি দৃষ্টিগোচর হচ্ছে।থেকে থেকে প্রচন্ড জোরে চিৎকার করছি আর অবিরাম কাঁদছি। শক্তি সঞ্চয় করলাম উঠে দাঁড়ানোর জন্য,পালাতে চাই আর পারছি না।কিছু চেষ্টার পর অবশেষে উঠে দাঁড়িয়েছি। তবে চিৎকার এখনো কানে আসছে।আস্তে আস্তে হাটা শুরু করলাম উল্টো দিকে।হাতটা আমার বাঁকা হয়ে গেছে আর প্রচণ্ড ব্যাথা করছে।মাথাটাও তীব্র ব্যাথায় ফেটে যাচ্ছে।বাতাসের তীব্রতায় হুমরি খেয়ে পড়ছি বারবার,কান্না তো স্রোতের মত বইছেই।তীব্র চেষ্টা করছি,শুধু একবার বাসাতে পৌছোতে পাড়লে---!!

পিঠের উপর সজোরে আঘাত পড়লো। এবারও পড়ে গেলাম মাটিতে।নাক ফেটে রক্ত ঝরছে,একটা পা হয়ত ভেঙ্গেও গেছে।সজড়ে কারো লাথি খেয়ে উল্টো শোয়া থেকে সোজা হয়ে গেলাম।আমার গায়ের উপর ফেলে দিলো নির্যাতিত সেই শরীর।গায়ে কোনো চামড়া নেই,হাতে কোনো আংগুল নেই,চোঁখের জায়গায় গর্ত-শুধু রক্ত ঝরছে,মাথার খুলিটা ফাটা,মস্তিষ্ক বেরিয়ে গেছে।ভয়ংকর ভাবে মেরেছে এ দেহকে।জীবনের সবথেকে বেশি ভয় পাচ্ছি।চিৎকার দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম তবে এবার পারিনি।গলাটা কেমন আটকে গেছে,কোনো শব্দ বের হচ্ছে না।আমার চারদিকে ঐ তিনটে বিভৎস মানুষ।আমার দম আটকে যাচ্ছে,কান্না থেমে চোখের পানি শুকিয়ে গেছে,চিৎকার করতে পাড়ছি না,শরীরের কোনো অঙ্গ নড়াতে পাড়ছি না।কোনো এক অদৃশ্য শক্তি আমার চুল টেনে ছিড়ে ফেলছে,বুকটা চিরে দেয়ার চেষ্টা করছে।নাকের রক্তে চোখ ভিজে গেছে,তাই ঝাপসা লালে দেখছিলাম তিনটে তৃষ্ণার্ত মুখ আমার দিকে তাকিয়ে আছে,কী ভয়ংকর তাদের চেহারা।দূরে এখনো শেয়ালগুলো ডাকছে তবে এখন তাদের কণ্ঠ ভারী হয়ে গেছে।