ভূতেদের সত্যিকারের বাসা

ভূতেদের যে সত্যিকারের বাসা, ওদের কবর, সেটাই যে হ্যানি দম্পতি খুঁড়েছিলো! এই হ্যানি দম্পতি হলো স্যাম হ্যানি আর জুডিথ হ্যানি। আশির দশকে ওরা টেক্সাসের হিউস্টনে খুব শখ করে একটা বাসা কিনেছিলো। বাসাটা দেখে ওদের মনে হয়েছিলো, ঠিক যেনো ওদের স্বপ্নের বাসা। আর বাসা কিনে ওরাও তো শুরু করে দিলো যতো রাজ্যের কাজ-কারবার।
তো, স্যামের মনে হলো, ওদের এতো শখের একটা বাসা, তাতে একটা সুইমিং পুল না থাকলে হয়? ব্যস, ঠিক করে ফেললো, ওদের বাসার পেছনে একটা সুইমিং পুল বানাবে। কিন্তু ওমা, সুইমিং পুলের কথা ভাবতে না ভাবতেই এক আজব চেহারার বুড়ো এসে হাজির হলো। এসে বলে কিনা, ‘তুমি যেখানে সুইমিং পুল বানানোর কথা ভাবছো, সেখানে আছে অনেক পুরোনো আমলের কবর। তোমার তো সাহস কম নয়, এমনিতেই কবরস্থানের ওপর বাড়ি বানিয়েছো, আবার এখন কবর খুঁড়ে সুইমিং পুল বানানোর চিন্তা করছো!’ এই না বলে বুড়ো কবর কোথায় আছে সেটা দেখিয়ে উধাও হয়ে গেলো।

স্যাম তো যাকে বলে একেবারে আকাশ থেকে পড়লো! এখানে কবরস্থান থাকলে বাড়ি বানানো হলো কেন? কখনো শুনেছো, কবরস্থানে বাড়ি বানানোর কথা? তারপরও বুড়ো যখন বলেছে, খুঁড়ে দেখতে সমস্যা কোথায়? ও একটা কোদাল নিয়ে খুঁড়তে লেগে গেলো। একটু পরে কোদাল কিসে জানে লাগলো। দেখে কি, পাইন কাঠ। হাত দিয়ে উপরের মাটি সরিয়ে দেখে, সত্যি সত্যিই একটা কফিন! খুলে দেখে, ভেতরে একটা কঙ্কালের মতো কি যেনো দেখা যাচ্ছে। পাশে আরেকটু খুঁড়তেই দেখে আরেকটা কফিন। এই কফিনের ভেতরে আবার লাশের বাম হাতের অনামিকায়, মানে যেই আঙ্গুলে বিয়ের আংটি পরা হয়, সেই আঙ্গুলে বিয়ের আংটিও আছে! সঙ্গে সঙ্গে শেরিফকে খবর দিলো ও। ভাবছো, শেরিফ আবার কে? আরে, ওই দেশে থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশকেই শেরিফ বলে। এসে দেখা গেলো, এ তো অনেক পুরোনো কবর, বেশিরভাগ হাড়ই গুড়িয়ে গেছে। যা-ও বা আছে, তার অনেকগুলোই ধরতে না ধরতেই গুঁড়ো হয়ে যাচ্ছে। আশেপাশে খুঁড়ে দেখা গেলো, আরো অনেকগুলো কফিন আছে। তার মানে ঐ আজব বুড়োর কথা আসলেও সত্যি। এখানে অনেক আগে আসলেও একটা কবরস্থান ছিলো।
কি আর করা! শখের সুইমিং পুলের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললো স্যাম। কিন্তু মাথায় তো এক নতুন পোকা ঢুকে গেছে, কাদের কবরস্থান এটা? কবরগুলোই বা কাদের? আর এই কবরস্থান পরিত্যক্তই বা হলো কি করে? খোঁজ নিতে নিতে জেসপার নর্টন বলে এক লোকের খোঁজ পেলো স্যাম। সে অ-নে-ক আগে এই বাসায় থাকতো। তার কাছ থেকেই জানতে পারলো, শুধু তাদের বাসাটাই নয়, আশেপাশের অনেকগুলো বাসাই তৈরি হয়েছে একটা পরিত্যক্ত আফ্রিকান-আমেরিকানদের কবরদের উপরে। আফ্রিকান-আমেরিকান কাদের বলে জানো তো? যে সব আফ্রিকান আমেরিকায় থাকতে গিয়েছিলো, ওদেরকে বলা হয় আফ্রিকান-আমেরিকান। আর আগে তো ওরা বেশিরভাগই যেত দাস হিসেবে। কেন, আগে ইউরোপ-আমেরিকার সাদা মানুষেরা যে কালো মানুষদের দাস হিসেবে ব্যবহার করতো, সে কথা জানো না বুঝি? এটা অবশ্য কয়েক শ’ বছর আগের কথা। এখন আর পৃথিবীতে কেউ কারো দাস নয়। বড়োজোর, তোমার বাসার কাজের ছেলে বা মেয়েটা তোমাদের মাইনে দেয়া কাজের লোক। কিন্তু কোনো ভাবেই দাস নয়, মানুষ। ওর সাথে কিন্তু সেভাবেই আচরণ করবে, কেমন?
শুধু তাই নয়, এই কবরস্থান সম্পর্কে আরো অনেক তথ্যই জোগাড় করে ফেললো স্যাম। এই কবরস্থানে মোট কবর দেয়া হয়েছিলো ৬০ জনকে। সর্বশেষ কবর দেয়া হয়েছিলো ১৯৩৯ সালে। তারপর আর কাউকেই এখানে কবর দেয়া হয়নি। তা না হলে কি আর কবরস্থানে বাড়ি বানানো যায়? আর যে দুইটা কবর স্যাম খুঁড়েছিলো, ওই দুটো কবর ১৯৩০ সালের, বেটি আর চার্লি থমাসের। ওরা আবার স্বামী-স্ত্রী ছিলো।
এতো কেবল কাহিনীর ভূমিকা। আসল কাহিনী শুরু হলো এরপরে। জেনে হোক, আর না জেনে হোক, স্যাম তো দুটো কবর খুঁড়লো, এবার কবরের মালিক বেটি আর চার্লিকে ঠেকায় কে? ওরা শুরু করলো জ্বালাতন। আর শুরু করবে না কেন, বলো? তোমার সুখের বাসা এভাবে ভেঙে দিলে তুমি কি জ্বালাতন করতে না? প্রথমে ওরা কেবল স্যাম আর জুডিথের বাসায় জ্বালাতন করতো। দেখা গেলো, ওদের ঘড়িটার ব্যাটারি খুলে রেখে দিলো। কিংবা পানির কল একবার খুলছে, আবার বন্ধ করছে। কখনো বা টিভির সুইচ-ই বন্ধ করে দিচ্ছে। নয়তো ফ্যান অফ করে দিচ্ছে। কিছুদিন পর ভূতেদের জ্বালাতন শুধু ওদের বাড়িতেই সীমাবদ্ধ থাকলো না, আশেপাশের বাসাতেও শুরু হয়ে গেলো। দিনদিন জ্বালাতনের মাত্রা এতোই বেড়ে গেলো, যে ওদের পক্ষে স্বাভাবিকভাবে বাসায় থাকাই অসম্ভব হয়ে উঠলো।
একদিন হলো এক মজার ঘটনা। রাতের বেলা জুডিথ ছিলো একা, স্যাম গিয়েছিলো নাইট ডিউটি করতে। তো রাতে জুডিথ শুনলো বারান্দার স্লাইডিং ডোর ঠেলে কে যেন ঢুকলো। অথচ ডোর ছিলো লক করা। ও তো জানেই, এ বেটি আর চার্লি ছাড়া আর কারো কাজ হতেই পারে না। কোনোমতে চোখ-মুখ চেপে শুয়ে থেকে রাত পার করে দিলো। সকালে স্যাম আসলে বিছানা ছেড়ে উঠে ক্লোজেট খুলে দেখে, ওর শখের লাল জুতো জোড়া নেই! নেই তো নেই, খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। দু’জন মিলে বাসার যতো জায়গা আছে, সব জায়গায় খুঁজেও ওরা জুতো জোড়ার কোনো নাম-নিশানাই পেলো না। শেষমেশ বাড়ির পিছে গিয়ে দেখে জুতো জোড়া বেটির কবরের উপর সুন্দর করে সাজানো! পরে খেয়াল করে দেখে, সেদিন ছিলো বেটির জন্মদিন। আর তাই যেন চার্লি ওকে জন্মদিনের উপহার দিয়েছে জুডিথের লাল জুতো জোড়া! কার না রাগ লাগে বলো তো দেখি! কিন্তু কিছু করারও নেই; ভ‚তের কাণ্ড বলে কথা!
দিন দিন ওদের এমনি জ্বালাতন আরো বাড়তে লাগলো। আশেপাশের বাসাগুলোতেও কোথাও কোনো গাছ হয় না। শখ করে গাছ লাগিয়েছো কি দু’দিন পরেই মরে যাবে। কিভাবে যে মরে যায়, কে জানে! যা কিছুই করো, কিছুতেই কিছু হয় না। আর সুইচ অন-অফ করা, পানির কল খোলা-বন্ধ করা, চুলা জ্বালানো-বন্ধ করা, এসব তো আছেই। সাথে যুক্ত হলো কথা বলা। প্রায়ই ওরা শুনতো, আশেপাশে কারা যেন কথা বলছে; বিড়বিড় করে কথা বলার মতো মৃদু শব্দ শোনা যেতো।
কাঁহাতক আর সহ্য করা যায়! স্যাম আর জুডিথ ঠিক করলো, অন্য কোথাও বাসা নেবে। কিন্তু টাকা কোথায়? ওরা যেই কোম্পানির কাছ থেকে বাড়িটা কিনেছিলো, তাদের নামে এক মামলা ঠুকে দিলো! কিন্তু ফল হলো উল্টো, মামলা হেরে আরো জরিমানা গুণতে হলো ওদেরকে। এবার ঠ্যালা সামলাও! কি করা যায়।
এবার জুডিথ কোমর বাঁধলো; হয় এসপার নয় ওসপার। ওদের কবর নষ্ট করেছি, ওদেরকে কবরের বাঁধন থেকে মুক্ত করে দিয়েছে, ওরা আর কী চাইতে পারে, বড়োজোর কারো জীবন! প্রয়োজনে ও ওর জীবনই দিয়ে দিবে, তবু এই জ্বালাতন আর মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে থাকবে না। স্যামদের বাড়ির পেছনে উঠোনে গিয়ে ও নিজেই একটা কবর খুঁড়তে শুরু করলো। একটু পর ওর বড়ো মেয়ে টিনাও এসে হাত লাগালো। দুজনে মিলে আধ ঘণ্টার মধ্যেই একটা বড়োসড়ো গর্ত খুঁড়ে ফেললো। এরপর টিনার যেন শরীর কেমন কেমন করতে লাগলো। ও ড্রয়িংরুমে গিয়ে একটা সোফায় এলিয়ে পড়লো। একটু পর ও বলতে লাগলো, ‘মা, বাবা, আমার বাচ্চাটাকে তোমরা দেখো, আমার বাচ্চাটাকে দেখো।’ আর চোখের মধ্যে কী যে ভয় খেলা করতে লাগলো! আর তারপর ওর চোখ বন্ধ হয়ে আসতে লাগলো। ওর মুখ দিয়ে আর কথা বের হয় না।
দেখে তো সবাই-ই খুব ভয় পেয়ে গেলো। খবর দেয়া হলো এক মনোবিজ্ঞানীকে। কিন্তু সে আসা পর্যন্ত তো টিনাকে জেগে থাকতে হবে, নাকি? সবাই মিলে ওর সাথে কথা বলে ওকে জাগিয়ে রাখার চেষ্টা করতে লাগলো। মনোবিজ্ঞানী এসে ওকে দেখে-টেখে বললো, ওর এক বড়ো ধরনের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। সবাই মিলে ওকে বাঁচানোর খুব চেষ্টা চলতে লাগলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো লাভ হলো না। দুই দিন পর মারা গেলো টিনা।
আর কী! মেয়ে হারানোর শোকে স্যাম আর জুডিথের তো পাগল হওয়ার দশা। খুব তাড়াতাড়ি-ই ওরা সেই অভিশপ্ত বাড়ি ছেড়ে দিলো। বাসা বাঁধলো মন্টানায়। এভাবে নিজেদের মেয়েকে হারিয়েই কবর খোঁড়ার অভিশাপ কাটিয়েছিলো স্যাম আর জুডিথ। কবর খোঁড়ার অভিশাপ, সে কী আর যে সে কথা!

ভয়ংকর রাত

তখন গরমকাল চলছে। মামাতো ভাই খুলনাতে থাকে। ভাবি প্রায় সময়ই ফোনে একেবারে কানটা ঝালাফালা করে দেয় খুলনাই আসার জন্য। পড়াশুনা চলাকালীন অনার্স একসাথেই আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করি। মামাতো ভাই অন্য ডিপার্টমেন্ট এ থাকলেও আমার এই বান্ধবিটার সাথে চুটিয়ে প্রেম করেছে চার বছর। পরে ফলশ্রুতিতে বিয়ে। এখন চাকুরীর সুবাদে দুজনেই খুলনাতে। অবশ্য আমি এখনো বিয়ে করিনি। তবে অতি শীঘ্রই হয়তো ফাঁন্দে পড়তে হতে পারে।


মামাতো ভাই আর বান্ধবী ভাবীর প্যান প্যানানির জন্য অফিস থেকে কিছুদিনের ছুটি নিলাম। ফোনে ওদেরকে বললাম আমি আগামিকালই খুলনা আসছি। যাক প্লান মত সব ঠিকঠাক করে গুছিয়ে নিলাম। ভাবলাম রাতেই রওনা হবো। কারন একেতো গরম কাল তার উপর দিনের বেলাতে প্রখর রোদ। ড্রাইভারকে ঠিকঠাক ভাবে বলে দিলাম, আমি আজ রাতেই খুলনা রওনা হচ্ছি। সোন্ধাই খাবার খাওয়ার পর মা আমাকে যথারিতী সাবধানতার উপদেশ বানী দিতে লাগলো। সাথে একটা মাদুলীও দিল। আমিতো ওটা দেখে অবাক হয়ে গেছে। মা, তুমিনা সেই আগের মানুষই রয়ে গেলে। এসব তাবিজ কবুজকে কি কেও এখন বিশ্বাস করে। মায়ের সোজা জবাব কেও না বিশ্বাস করুক আমি করি। তুই এটা সাথে করে খুলনা নিয়ে যাবি। কি আর করা যথারিতী মায়ের হুকুম মেনে আমি আর আমার ড্রাইভার কাদের গাড়ীতে গিয়ে উঠলাম। ঘড়িতে রাত নয়টা মত বাঁজে। ঢাকা শহরের কোলাহল থেকে বেশ খানিকটা দুরে চলে এসেছি। এমনিতেই ভরা পূনির্মা রাত তার উপর এই লং ড্রাইভ, বেশ রোমান্টিক করে দিচ্ছে বটে। ড্রাইভারের পাশের সিটেই আমি বসে। পুরো গাড়ীতে আমি আর ড্রাইভার কাদের ছাড়া কেও নাই। মাঝে মাঝে কাদেরের সাথে কথা হচ্ছে আর একশো থেকে একশো বিশ বেগে ছুটে চলেছে গাড়ি। কাদের কিছুক্ষন পর একটি গানের সিডি বের করে বাজাতে লাগলো। এমনি সময় ফোনটা বেজে উঠলো। ছোট আপু ফোন করেছে। হ্যালো জুথি বল... ভাইয়া তোরা কতদূর এখন, একা যেতে কোন সমস্যা হচ্ছেনা তো? আমার জবাব, আরে না। টেনশন নিসনা, পৌছে ফোন দেব। আর বাবাকে একটু বুঝিয়ে বলিস। রাখি। ফোনটা রেখে দিলাম। ফোনটা রাখতে রাখতেই জীবন নিয়ে কেমন যেন বিচিত্র অনুভূতি হতে লাগলো। ছুটে চলা জীবনের গাড়ীর শো শো শব্দে নচিকেতার গানটার মত মনে হল- রাত বলে যায় যায়, ডাক দিয়ে যায়। চোঁখের পাতাই যেন কত কিছুই ভেসে উঠছে। শো শো করে ছুটে চলছে গাড়ী, আর জসনা ছড়াচ্ছে চাঁদ। রাত এগারোটা মত বাজতে বাজতেই কাদের বলে উঠলো- স্যার আমরা এখন ফেরী পার হবো। টাকা পয়সার হিসাব চুকিয়ে দিয়েই কিছুক্ষনের মধ্যেই আমরা ফেরীতে উঠলাম। কিছুসময় পরে ফেরীটা গাড়ীতে ভরলে আসতে আসতে টার্ন করলো। তারপর এক সময় মাঝ নদীতে। জসনা ভরা চাঁদনী রাতে এই নদীর পানি যেন অপরুপ রুপের শোভা ছড়াতে লাগলো। কাদের বলল স্যার দেখছেন কত সুন্দর লাগছে চাঁদ আর নদীর পানির ঢেও গুলোকে। আমরা ফেরী পার হয়ে গেছি। আবারো হায় ওয়েতে ছুটতে শুরু করেছে আমাদের গাড়ী। কিছু দুর পর পর একটি দুটি গাড়ীর হেডলাইট দেখা যাচ্ছে। আমার চোঁখটা কেমন অবশ অবশ লাগছে। গাড়ীর ছিটেই হেলান দিলাম চোখ বুঝে। কিছুদুর যেয়েই হঠাত্ করেই কাদের গাড়ীর ব্রেকটা এমন ভাবে ধরলো, যেন পুরো গাড়ীটাই উল্টে পড়ে যাবার মত অবস্থা। এই কি হৈছে কাদের, এত জরে কি গাড়ীর ব্রেক ধরে কেও। কাদেরের জবার স্যার আমার দোষনা, ওনার জন্যই সব কিছু। এবার আমি আস্তে আস্তে গাড়ীর সামনে তাকিয়ে দেখি একটি বিশ থেকে বাইশ বছরের মেয়ে একটা বাচ্চা কোলে করে দাড়িয়ে আছে। ঘড়িতে রাত একটা। মেয়েটি সাদা শাড়ী পরে আছে। তার আঁচলের এক অংশ মাটির সাথে গড়াগড়ি খাচ্ছে। চুলগুলো এলোমেলো আর কান্না ভেজা চোঁখ। আমি গাড়ির দরজাটা খুলে নিচে নেমে বললাম- কি ব্যাপার, আপনি হঠাত্ করে একটা বাচ্চা কোলে করে আমার গাড়ির সামনে আসলেন কেন? মেয়েটি কান্না জড়ানো কন্ঠে বলে উঠলো স্যার আমাকে বাঁচান। আমার স্বামী নয়তো আমাকে আর আমার বাচ্চাকে মেরে ফেলবে। আমি কোন মতে বাড়ী থেকে পালিয়ে এসেছি। সামনেই আমার বাবার বাড়ী। আপনি দয়া করে আমাকে একটু আপনার গাড়ীতে নিয়ে চলুন। আমি বললাম, দেখুন আপনি পথ থেকে সরে দাড়ান। আমি আপনাকে গাড়ীতে নিতে পারবোনা। এই কথা বলার সাথে সাথে মেয়েটি তার এক হাতে বাচ্চাটিকে বুকে নিয়ে আর এক হাতে আমার পা জড়িয়ে ধরলো। কাদের ওপাশ থেকে বলল- স্যার আমাদের গাড়ির পিছনের ছিটতো খালি পড়ে আছে। আমরা না হয় এই বিপদ থেকে একটু ওকে সাহায্য করি। আর সামনেই তো ওর বাবার বাড়ী। আমরা ওখানেই ওকে নামিয়ে দেবো। কাদেরের এই কথা শুনে মেয়েটিকে গাড়িতে উঠতে বললাম। মেয়েটি বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে পিছনের ছিটে উঠে বসলো। আমাদের গাড়ী কিছুক্ষন চলতেই থাকলো। এর মাঝে একবারো পিছন ফিরে তাকানো হয়নি। হঠাত্ করেই মনে হলো মেয়েটিতো কিছুদুর পরেই নামতে চেয়েছিল। আমি গাড়ির মিররের দিকে চেয়ে দেখার চেষ্টা করলাম মেয়েটির কি অবস্থা দেখার জন্য। কিন্তু আয়নার ভিতরেতো কোন কিছুই দেখা যায়না। আমি একটু ভালো ভাবে আয়নার দিকে চোখ দিলাম। দেখলাম দু টো লাল চোঁখ দেখা যায়। কিছুক্ষন পর দেখি মেয়েটি তার কোলের বাচ্চাটাকে মাথা নিচের দিকে দিয়ে ধরে আছে। আমি ঘামতে শুরু করেছি। এবার দেখি মেয়েটি বাচ্চাটির দু পা দুটি হাত দিয়ে ধরে টেনে ছিড়তে লাগলো। মেয়েটির লাল চোঁখ আর অদ্ভূত চাওনি কি যে ভয়ংকর, বলে বোঝানো যাবেনা। কাদের তার আপন মনে ড্রাইভ করে চলে যাচ্ছে। ও কি ভয়ংকর। বাচ্চাটির মাথার দিকটার মুখের মাংসগুলো খেতে শুরু করেছে মেয়েটি। মুখে রক্তের লালা ঝরছে। আমি যে আয়নাতে এটি দেখছি মেয়েটি এখনো সেটি খেয়াল করেনি। ভাবতে থাকলাম কাদের যদি এখন এই দৃশ্য দেখে তাহলে একটা অঘটন ঘটে যাবে। আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছিনা। এবার আমি আয়নার দিকে তাকাই। হঠাত্ করেই আয়নাটির ভিতরে তার লাল চোঁখে চোখ পড়ে যায়। বিভস্য রক্তের লালা জড়ানো চেহারা নিয়ে সে আমার দিকে তাকায়। পুরুষ কন্ঠে উঠে পিছনে তাকাবি না।কিছুক্ষণ পর মেয়েটি বাতাসে মিলে যায়।।।।।।।।

ভয়াল রাত্রি

পাবনা জেলার একটা প্রত্যন্ত গ্রামে আমার শৈশব আর কৈশোর কেটেছে। এখানকার স্কুল থেকেই আমি এস, এস, সি পাশ করেছি। এরপর অবশ্য শহরে চলে আসি। এতো কথা বলছি কারন আমার ঘটনাটা এই গ্রামেই ঘটেছে। আমার সাথে ঘটেছে বললে আসলে ভুলহবে। কারন ঘটনাটি ঘটে আমার মায়ের সাথে। আমি একজন প্রত্যক্ষদর্শী।
১৯৯৪ সাল।
Sponsored By :mobikedokan
আমি তখন বেশ ছোট। ক্লাস থ্রি তে পড়ি।একে তো গ্রাম অঞ্চল তার উপর আমাদের বাড়ি ছাড়া আসে পাশের কোনও বাড়
িতে ইলেক্ট্রিসিটি নেই। বলা উচিত, আমাদের আসে পাশের বেশিরভাগ বাড়িঘরই কৃষকদের। তাই সন্ধ্যা হবার পরপরই চারদিকে সুনসান নিরবতা নেমে আসে। ঝি ঝির শব্দ ছাড়া অন্য কোনও শব্দ পাওয়াযায় না। আমাদের বাড়িটা অনেক বড় জায়গা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত। বাড়িতে একটা এক তলা বিল্ডিং, একটা টিনের ঘর, আর একটা রান্নাঘর। গ্রাম বলে রুমের সাথে কোনও লাগানো টয়লেট নেই। বাড়ির পশ্চিম দিকে একটা বিশাল বাঁশ বাগান। তার সামনে কিছুদূর এগুলেই ২ টা কবর। আমাদের পরিচিত কারো না। আমার বাবা বাড়িটা বানানোর আগে থেকেই সে কবর ২ টা ছিল।

যেদিনকার ঘটনা সেদিন রাতে আম্মা আমাকে রাত ২ - ২.৩০ দিকে ঘুম থেকে জাগান টয়লেটে যাবার জন্য। ছোট মানুষ তো, তাই প্রতিদিন ঐ সময়টাতে আমাকে ডেকে উঠানো হতো যাতে বিছানা না ভেজাই।যাই হোক, ঘুম জড়ানো চোখে আমি উঠে টয়লেটে গেলাম। এসে আম্মাকে পেলাম না। কি ভাবলাম মনে নেই, কিন্তু আমি ঘরেঢুকে বিছানায় উঠে যাই এবং কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ি। এভাবে কতক্ষণ ঘুমিয়েছিলাম মনে নেই, তবে কিছু সময় পর বিকট চিৎকারে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। প্রথমে ঘাবড়ে গেলেও পরে দৌড়ে রুম থেকে বের হই। দেখি উঠানে আমার আম্মা সেন্সলেস হয়ে পরে আছেন। আমার দুই বড় ভাই জলদি জলদিআম্মাকে ধরে ঘরে নিয়ে আসে। সে রাতে অনেক চেষ্টা করেও আম্মার জ্ঞান ফেরানো সম্ভব হয়নি। আমার বাবা সরকারী চাকরি করে। সেই কারনে উনি প্রায়শই ঢাকা থাকতেন। বাড়িতে থাকতাম আমরা ৪ ভাই বোন। সেই রাতে আমরাঅনাথের মত কেঁদে রাত পার করলাম। আমার আম্মার জ্ঞান ফিরে সকালে ফজরের নামাজের পর। জ্ঞান ফিরলেও তিনি আমাদের সাথে নরমাল কোনও কথা বার্তা বললেন না।
Sponsored By :mobikedokan
যা বললেন আবল তাবল এবং ছোট থাকার কারনে আমি প্রায় কিছুই বুঝতে পারলাম না। এভাবে প্রায় বছর খানেক কেটে গেলো। আমার বাবা, আম্মাকে ডাক্তার কবিরাজ সব খানেই নিয়ে গেলো কিন্তু অবস্থার কোনও উন্নতি হচ্ছিল না। আম্মা প্রায়ই ঘুমের মধ্যে চিৎকার করে উঠে বলতেন, “আমার হাতটা খেয়ে ফেলল। তোরা জলদি কিছু কর। আমাকেবাঁচা।” কিন্তু আমরা ছোট ছিলাম তাই কিছুই করতে পারতাম না। শুধু কাঁদতাম পাশে বসে। এভাবে চলার পর হটাত একদিন এক কবিরাজের সন্ধান পাওয়া গেলো। তিনি আমাদের বাড়িতে আসলেন। আমার আম্মাকে দেখলেন। কবিরাজ এমনিতে খুবই কম কথা বলতেন, তাই আমার বাবা অনেক প্রশ্ন করলেও তিনি বেশিরভাগেরই কোনও উত্তর দিলেন না। শুধু বললেন, একটু পায়েশ রান্না করতে। পায়েশ রান্না করা হলে তিনি তা একটা কলা পাতায় ঢেলেপশ্চিম দিকের কবর গুলোর পাশে রেখে আসলেন। তারপর আমদের বাড়ির চতুর্দিকে৪ কোণায় ৪ টা খুঁটি পুঁতে দিলেন এবং শেষে আমার আম্মাকে কয়েকটা তাবিজ দিয়ে চলে গেলেন। বলা বাহুল্য, সেদিনের পর থেকে আমরা আম্মার মধ্যে পরিবর্তন দেখতে পেলাম। আম্মা সপ্তাহ ঘুরতেই প্রায় সুস্থ হয়ে গেলেন। তারপর আম্মার মুখেই আমরা শুনেছিলাম যে সেদিন কি হয়েছিলো,
সেদিন আমি এক পাশের টয়লেটে ঢুকার পর আম্মা অন্য পাশের টয়লেটে ঢুকেন। আমি টয়লেট করে চলে আসার কিছু সময় পর আম্মা টয়লেট থেকে বের হন। হটাত একটা দমকা বাতাস বয়ে যায় এবং আম্মাকে অবাক করে দিয়ে বাঁশঝাড় থেকে একটা কুকুর বের হয়। উল্লেখ্য, আমাদের টয়লেটটা বাঁশঝাড়ের পাশেই ছিল। কুকুরটার সাইজ একটা ৬ মাসের বাছুরের সমান ছিল। মাথায় ২ টা শিং এবং চোখ দুটো যেনও আগুনের গোলার মতন জ্বলজ্বল করছিলো। জিহ্বাটা বেড়িয়ে আছে এবং তা থেকে অনবরত লালা গড়াচ্ছে। কুকুরটা বাতাসের বেগে আম্মার সামনে আসে এবং ঠাণ্ডা চোখে আমার আম্মার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপরের ঘটনা আর আমার আম্মার মনে ছিল না।
এবার একটা রহস্য উদঘাটন করা যাক। আম্মা যখন অসুস্থ ছিলেন তখন তিনি প্রায়ই ঘরের মধ্যে বলতেন, “আমার হাতটা খেয়ে ফেলল।” এটা যখন উনাকে জানানো হয় তখন তিনি বলেন, “তিনি দেখতেন সেই কুকুরটা এসে চিবিয়ে চিবিয়ে উনার হাতটা খাচ্ছে।”
পাঠকদের উদ্দেশে কিছু কথাঃ
আপনারা হয়তো বলবেন গল্পটা বানানো। তাতে আমার কিছু যায় আসে না। তবে যেই অবস্থা আমরা ৪ ভাই বোন পার করেছি, মহানআল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, এমন সময়যেনও কারো কাটাতে না হয়। কারন আম্মা ঘরের মধ্যে তখন অনেকরকম কথা বলতেন যা শুনে প্রায়ই মনে হতো, আম্মা হয়তো আর বাঁচবেন না। আম্মা কি কথা বলতো তা এখনআমার পুরোপুরি মনে নেই। তবে খাওয়া দাওয়ায় অনেক সমস্যা হতো। কারন আমরা কেউই রান্না করতে পারতাম না। মহান আল্লাহর ইচ্ছায় আমার আম্মা এখন পরিপূর্ণ সুস্থ। আপনারা সবাই আমার আম্মার জন্য দোয়া করবেন।(Collected)

একটি রোমান্টিক অলৌকিক গল্প

চারদিকে অন্ধকার আর অন্ধকার। এরই মধ্য দিয়ে ছুটে চলছে রাতের ট্রেন। আমার বিয়ের কথাবার্তা চলছে তাই দেশের বাড়ি যাচ্ছি। কমলাপুর থেকে ট্রেনে উঠেছি। আমার কামরায় কয়েকজন ছিলো তাদের সাথে গল্প করে ভালোই সময় কাটালাম। সবাই একে একে নেমে যাওয়ায় আমি একা হয়ে গেলাম এবং একরাশ অন্ধকার আমায় গ্রাশ করে নিলো। আমি নামবো একদম শেষ ষ্টেশনে, তাই ভাবলাম একটা ঘুম দিয়ে নেই ষ্টেশনে পৌছাতে প্রায় শেষ রাত হবে। ঘুমিয়ে গেছি হঠাৎ ................ 




একটা ঝাকুনি দিয়ে ট্রেন থেমে গেলো। কিছু বুঝে উঠার আগেই একটা মেয়ের আবছা মত দেখলাম ট্রেনে উঠে আসলো এবং ট্রেনটি আবার চলতে আরম্ভ করলো(আবছা দেখার কারন চারদিকে অন্ধকার ছিলো)। যাহোক আমিতো ভয় পেয়ে গেছিলাম না যানি আবার ট্রেনে ডাকাত পড়েছে আবার। ইদানীং এদিকে নাকি খুব ডাকাতি হচ্ছে। যাক ট্রেন আবার চালু হওয়ায় হাফ ছেড়ে বাচলাম। এতসব ভাবতে ভাবতে আমার পাশের মেয়েটার দিকে তাকানোর সুযোগই পাইনি। সুযোগ থাকলেও কিছুই করার নেই চারদিকে যে অন্ধকার। যাক আমি লজ্জায় গুটিয়ে গেলাম। লজ্জা পাওয়ার কারন ও ছিলো একটি মেয়ে আর আমিই শুধু একটা কামরায় তাও অন্ধকার এর মধ্যে। যাহোক নিজেকে সহজ করার জন্য পকেট থেকে মোবাইল টা বের করলাম। এবং উদ্দেশ্যহীন টিপাটিপি আরম্ভ করলাম। যাহোক অভাগা যেখানে যায় নদীর পানিও শুকিয়ে যায়। কোন জানান দেওয়া ছাড়াই মোববাইলটা বন্ধ হয়ে গেলো। ভাবলাম চার্জ শেষ। কিন্তু বাসা থেকেতো ফুল চার্জ দিয়ে বের হইছি। যাক মোববাইলটা আবার পকেটে রেখে দিলাম। কামরায় আবার অন্ধকার নেমে এল। মেয়েটাইই প্রথম নিরবতা ভাংলো। বলে উঠলো আমি শ্রুতি.... আমি বলতে গেলাম আমি হাসান। আশ্চর্য হয়ে লক্ষ করলাম আমার কন্ঠ অনেকটা কোলা ব্যাঙের মত হয়ে গেছে, বুঝলাম ভয়ে এমনটা হয়েছে। নিজেকে সহজ করার জন্য হাসলাম......। মেয়েটির কন্ঠ অনেক মিষ্টি... মেয়েটি আমার অবস্থা বুঝলো কিনা জানিনা তবে সে তার ব্যাগ থেকে একটা মোমবাতি বের করে জ্বালালো। আমি আশ্চর্য হয়ে লক্ষ করলাম প্রচন্ড বাতাস থাকা শর্তেও মোমবাতিটা দিব্যি জ্বলছে। যাক এবার মেয়েটার চেহারার দিকে এবার তাকালাম। অতটা ফর্সা না, গোল মুখ চিকন নাক.....আর বর্ননা দিতে পারবোনা। এককথায় বলবো মায়াবী একটা চেহারা। দেখলেই ভালোলাগে। আস্তে আস্তে কথায় কথায় পরিস্থিতি সহজ হয়ে এলো। আমিও আমার সম্বন্ধে বললাম সে ও তার সম্বন্ধে বললো। একটা জিনিস দেখলাম ওর শরীল থেকে কেমন যেনো অদ্ভুত এক সুগন্ধি বের হচ্ছে।সুগন্ধিটা কেমন যেনো নেশা ধরানো। ওকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বলতে পারবোনা। ঘুম ভাঙলো শেষ রাতের দিকে। জেগে দেখি কামরা খালি..... শ্রুতির জায়গায় পড়ে আছে তার জ্বালানো মোমবাতির শেষ অংশ। ট্রেনও ষ্টেশনে পৌছে গেছে। ওর নাম্বারটাতো নেওয়া হয়নি। ইশশ.... ওর বাড়ির এড্রেসটাওতো নিলামনা। টিকিট চ্যাকার কে জিঞ্জেস করলাম এই কামরায় যে মেয়েটি আমার সাথে ছিলো সে কোথায়? ও বললো এখানে তো কেউই ছিলো না। রাতে কয়েকবার আমি চ্যাক করেছি দেখেছি আপনি একা একা কথা বলছেন আমি ভাবলাম আপনি বুঝি ফোনে কথা বলছেন। আমি তো থ..... আমার ফোনতো সেই শ্রুতি উঠার পরই বন্ধ হয়ে গেছে। পকেট থেকে মোবাইল বের করে অন করলাম এখনো অর্ধেক চার্জ। ভেবে পেলামনা এসব কি হল আমার সাথে??? আমি কি তবে এসব স্বপ্নে দেখেছি??? স্বপ্ন যদি হয় তবে ওর জ্বালানো মোমবাতির শেষ অংশাবশেষ যে এখনো আমার হাতে। এটা কিভাবে সম্ভব? এগুলো ভাবতে ভাবতেই ট্রেন থেকে নেমে বাড়ির পথ ধরলাম। বাড়িতে পৌছেই খাওয়া দাওয়া করে এক ঘুম দিলাম। ঘুমের মাঝেই স্বপ্নে দেখলাম শ্রুতিকে। ও হাসছে আর ওর মায়াভরা মুখ আমায় যেনো অপার্থিব এক আনন্দে ভরিয়ে দিচ্ছে। ঘুম থেকে উঠে সারাদিন ওর কথাই ভাবলাম। আমি কি ওর প্রেমে পড়েছি??? প্রশ্নটা বারবার মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো। আর বাস্তবে কি ওর কোন অস্তিত্ব আছে??? যাহোক বাড়িতে যে কাজে আসা আমার জন্য মেয়ে দেখতে যাবে বাবা আর বোন সাথে আমাকেও নিবে। যাহোক কেন যেনো আমার মন সায় দিচ্ছিলোনা। কারন আমার মাথায় ঘুরেফিরে শ্রুতির চিন্তাই আসছে। যাহোক সবার জোরাজুরিতে মেয়ে দেখতে চললাম। বাবা আর বোনের মেয়ে পছন্দ হয়েছে এবার আমার দেখার পালা। মেয়ের দিকে তাকিয়েই আমার চোখ কপালে উঠার অবস্থা। এ যে শ্রুতি ........ আমার সারা শরীলে এক আনন্দবন্যা বয়ে গেলো। কিন্তু মেয়েটিযে নির্ভীকারভাবে বসে আছে, যেনো আমাকে আগে কখনোই দেখেনি। যাক বোনকে বলে কয়ে মেয়েটির সাথে একা কথা বলার ব্যাবস্থা করলাম। ওর নাম বলল স্মৃতি। ওকে বললাম আমাকে আগে কখনো দেখেছে কিনা। সে মাথা নেড়ে বলল না। আমি কথাটাকে একটু ঘুরিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলাম আমি বোধহয় তোমাকে ট্রেনে দেখেছি। ও বললো আমিতো কখনো ট্রেনেই উঠিনি। আরও কিছু ওকে বলতে গিয়েও থেমে গেলাম কারন আবার যদি অন্যকিছু মনে করে? আমি আর কিছুই বললামনা। আমি যদি ওকে কল্পনাই করবো তাহলেতো আগে ওকে দেখলে হত। আমিতো আজকের আগে কখনোই দেখিনি। তাহলে ট্রেনে কে আসলো আমার সাথে। আমার কল্পনাশক্তি কি এতই প্রবল যে আমি ওকে আগেই কল্পনার চোখ দিয়ে দেখে পেলেছি। নাকি এটা অলৌকিক??? 
কোন উত্তরই আমার জানা নেই।
তারপর স্মৃতির সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেলো। এখন অনেক রাত জানালা দিয়ে বাতাস হুঁহুঁ বাতাস বইছে স্মৃতি ঘুমিয়ে আছে। যেনো আমার কল্পনার শ্রুতির আরেকটা কপি।এটা অলৌকিক নয় কি??? আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘুমাতে যাই......... আমার কল্পনার শ্রুতিরুপি বাস্তব স্মৃতির পাশে।
অনেকদিন পর পোষ্ট করলাম। সেজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমার লেখাটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে তবে অবশ্যই জানাবেন। আপনাদের মন্তব্য আমায় পরবর্তী পোষ্ট দিতে আগ্রহ জোগায়। সাথে থাকার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।

আজ মায়ার বিয়ে

আজ মায়ার বিয়ে। সে জানেনা তার বিয়ে কার সাথে হচ্ছে। বউ সেজে সেই সন্ধ্যা থেকে বসে আছে। বর্তমান সময়ে এসেও সে তার বরের ছবি দেখেনি। তবে নাম শুনেছিলো আকাশ। এসব ভাবতে ভাবতেই কেউ একজন এসে বলে গেলো বর এসে। শুনেই মনে এক ভয় কাজ করতে লাগলো। রাত ৮টায় তার বিদায় কার্য শেষ হয়ে গেল। বাসর রাতে বসে ভাবছে তার বর এতোটাও খারাপ না। দেখতে শুনতে ভালোই।


এদিকে আকাশ ভাবছে তার অচেনা একটি মেয়ে সাথে বিয়ে হয়েছে। কিভাবে কি বলবে গিয়ে।।। যাই হোক রুম এর সামনে গেলো। হঠাৎ খেয়াল করলো রুম থেকে কিছু শব্দ আসছে। শব্দটা এমন ছিলো যেনো কেউ করাত দিয়ে ঘষে ঘষে কিছু কাটছে। দরজায় কান দিয়ে শুনার চেষ্টা করলে সেই শব্দ পেলো না। এখন ঠিক হাড় চিবানোর শব্দ পাচ্ছে। সে ভয় পেয়ে গেলো। তখন রাত প্রায় ১টা। গ্রামের বাড়ি বলে সব মানুষ ঘুমায়ে পড়ছে। সে কি করবে বুঝতে না পেরে বাহিরেই কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর আবার কারো কান্নার শব্দ পেলো। ভাবলো মায়া কাদছে তাই দরজায় টোকা দিলো। কারন খুলার সাহস তার ছিলো না। তারপর মায়া এসে দরজা খুলে দিলো। দেখলো সব ঠিকঠাক। সে ভাবলো তার ভুল ছিলো। কিছু না ভেবেই ঘুমিয়ে পরলো।
মায়া কে যতই দেখে ততই আকাশ তার প্রেমে পড়ে যায় । এখন তো বৌ প্রেম করাটা পাপ না।
বিয়ের কয়দিন পরে আকাশ খেয়াল করল কিছু একটা মিস্টেক হচ্ছে কিন্তু খুজে পাচ্ছে না । মায়া কেমন জানি পবিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। কফি চাইলে ২ মিনিটেই করে দিচ্ছি। ঘরের কাজকর্ম সব কি জাদুর মতই যটপট করে ফেলছে। আকাশ ভাবল এটা মায়ার গুণ। গ্রামের মেয়ে বলে কথা ছোট থেকেই কাজ শিখে ফেলছে।
একদিন আকাশকে কিছু লোকজন অফিসের কাজ এর কারণে বাসায় এসে হুমকি দিয়ে যায়। সেটা মায়া দেখছে ।
মাসখানেক পরের আকাশ ও মায়া ঘুড়তে বেড় হয়েছে । ঐ হুমকি দেয়া লোকগুলো মায়াকে দেখে ভয়ে পালাতে লাগল। আকাশ যেহেতু গোয়েন্দা তাই তার কিছু সন্দেহ হল কিন্তু মায়াকে বুঝাতে দিল না।
তারকিছু দিন পর এক বৃদ্ধ লোক আকাশ কে এমনি এসে বলল “বাবা বৌ আসলে বৌ না সে এক অতৃপ্ত আত্মা। সে তোমার কোন ক্ষতি করবে না“ তবে তুমি তার সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করবে না।
আকাশ কিছু বুঝার আগেইে ঐ বৃদ্ধ চলে গেছে।
আকাশ ভাবতে শুরু করছ আর মায়ার দিকে নজর রাখছে মায়া যেখানেই যায় না কেন ২ মিনিট এর বেশি লাগে না। আকাশের ফ্লাট থেকে ছাদে যেতে ১৫ মিনিট লাগে সেখানে সে ৫ মিনিট।
এক রাতে আকাশের ঘুম ভেঙ্গে গেল কি কারণেই উঠে পাশে তাকিয়ে দেখে মায়া নাই। আকাশ ভাবল ওয়াশ রুমে কিন্তু ওয়াশ রুম থেকে তো মাত্রই এল। তাহলে কি হল---- আকাশ ছাদে গেল খুজতে খুজতে গিয়ে যা দেখল তা আকাশ কখনো কল্পনাই করে নাই।
মায়া একটা মানুষকে কুপিয়ে কুফিয়ে কাটছে.. আর মায়ার চেহেরা দেখতে অনেক বাজে রকম দেখাচ্ছে……
চোখ দুইটো নাই গালে কাটা দাগ, মাথার মাঝ বরাবর দুভাগ করা একটা লাশ। পেট থেকে নাড়িবুড়ি বেড় হচ্ছে। মনে হচ্ছে তাকে আগে ভয়ানক ভাবে খুন করা হয়েছে।
আকাশ অজ্ঞান হয়ে যায়। সকালে জ্ঞান ফিরলে দেখে মায়া তার পাশে বসে আছে। আকাশ মায়াকে দেখে ভয় পাচ্ছে। চোখ বন্ধ করে রাখছে। মায়া উঠে চলে গেছে। রাতে আকাশ সাহস করে মায়া করে ডাকল।
মায়া তুমি কে…? কি চাও তুমি …? বলতেই আকাশ ঘেমে যাচ্ছে। বৃদ্ধ লোকটা বলছে তাকে রাগানো যাবে না। তাইে আকাশ ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করল….?
হুম তোমাকে বলব কারণ তুমি জেনে গেছ… আমি আজ থেকে ৫ বছর আগে মড়ে গেছি। মড়ে গেছি বলটা ভুল হবে আমাকে খুন করছে আমার আপন চাচা আর চাচি মিলে। আমার লাশটা জঙ্গলে ফেলে দেয়। তুমি তখন নতুন জয়েন্ট কর আমার কেসটা তোমার প্রথম কেস হয় তুমি কোন ফলই পাও নাই তদন্ত করে পরে আমাকে তুমি বেওয়ারিশ লাশ হিসাবে কবর দিয়ে দাও আর তখন থেকেই আমি তেমার পিছনে আছি। আমার জিদ হচ্ছিল তোমার প্রতি তুমি গোয়েন্দা হয়েও খুজে পেলে না আমার খুনিদের কে। তারপর তো তুমি জানোই………….
এখন চলে যাও আমাকে ছেড়ে… আমি তোমার চাচা-চাচিদের শাস্তির ব্যবস্থা করছি।
তা আর লাগবে না । আমি নিজেই তাদের শাস্তি দিছি।
তাহলে আর কি চাও।
তোমাকে তোমার ভালবাসা আমাকে পাগল করেছে।
এটা সম্ভব না মায়া তুমি একটা আত্মা।
হুম আমি জানি । আমি চলে যাব আমাদের বিয়ে ১ বছর পূতিতেই তুমি একটা বিয়ে করে নিও। আমাকে ক্ষমা করে দিও। আর এই কয়টা দিন আমাকে তোমার হয়ে থাকতে দিও।
আকাশ মাথা নাড়ালো।
মায়া চলে গেছে আকাশ নতুন করে বিয়ে করছে নতুন সংসার করছে। তারপরও মাঝে মাঝে আকাশ গভীর রাতে ছাদে যায় মায়াবতীকে দেখতে।